এবোরশন


এক্সাক্ট সময়টা মনে করতে পারছি না!

তবে যতদুর মনে পড়ে এই সময় আমি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ি,

.......…...........

আমি যে মেসে থেকে পড়াশোনা করি সেই মেসের (বড় ভাই+ বন্ধু) 


বিনুদাকে নিয়ে... 


আমি আর আমার রুমমেট বিনু দাদা..

বিনু দাদা তখন অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ে।

খুবই  ভাবগাম্ভীর্যপূর্ন সল্পভাষী তবে মিষ্টভাষী একজন মানুষ.......


 অল্পতেই মিষ্টি কথা বলে মানুষকে কনভিন্স করতে পারে।

এই গুনটা কিন্তুু সকলের থাকে না,

খুবই কদাচিৎ মানুষের এমনটা থাকে...


বিনুদাদাকে আমি খুবই রেসপেক্ট করতাম এবং এখনও করি,,

বিনুদাদার পুরো নাম বিনোদ চৌধুরী,,, 


আমি শর্ট করে বিনুদা বলে ডাকতাম....

বিনুদা আমার এক বৎসরের সিনিয়র হলেও সম্পর্কটা ছিলো বন্ধুসুলভ.... 

 আমাদের রুমে আরেকজন লোকের যাতায়াত ছিল প্রতি মাসেই....

আমাদের প্রিয় রুনা দিদি.......

 আদর করে তাকে ডাকতাম রুনাদি বলে.....

তিনি যখনি রুমে আসতেন নিজ হাতে মাংস রান্না করে নিয়ে আসতেন,

আরও নিয়ে আসতেন  অনেক রকমের পিঠা,,,

মাংসের সাথে একটা গুড কম্বিনেশন.... 

আর বিনুদার প্রিয় খাবার সরষে ইলিশ, আতপ চালের পায়েস ইত্যাদি হরেক রকমের খাবার.......


তিনি যে সব সময় যাতায়াত করতেন তা কিন্তুু নয়,,

তবে প্রতি মাসেই ১/২ বার আসতেন,,, 

উনি আসলে বিনুদার চেয়েও বেশী খুশী হতাম আমি কারন আমি ছোট থেকেই খাদ্যরসিক,ভোজনবিলাসী মানুষ....

আর রুনাদি আসা মানেই হরেক রকমের খাবার নিয়ে আসা.. 

খাবার গুলো বিনুদার প্রিয় কিন্তুু ভোগ করতাম আমি...

এদিকে রুনাদি মেসে আসা মানেই বিনুদাকে রুমটা বর্গা দিয়ে আমাকে চলে যেতে হতো অন্য রুমে নতুবা বাহিরে কোথাও...

এই সময়টাতে পৃথিবীর কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে শরীর উপভোগে মেতে উঠতো বিনুদা আর রুনাদি....

এই শরীর উপভোগের বিষয়টা চলতো ঘন্টাখানেক

,,

আমাদের মেসের ৩ রুমে বিনুদা সহ ৬ জন থাকি,,,,

আমি আর বিনুদা বাদে মেসের অন্য সকলেই জানতো রুনাদি বিনুদার বাগদত্তা.... 


তাই রুনাদির কদাচিৎ আসাটা কেউ নেগেটিভভাবে নিতো না বরং পজিটিভলি দেখতো....

কিন্তুু হাটের হাঁড়ির ভিতরের খবরটা আমি ভাল করেই জানতাম...

তারা দুজন স্রেফ প্রেমিক-প্রেমিকা। 


একদিন বিনুদা কলেজ থেকে মুখ কাঁচু মাচু করে মেসে আসে,,,,

এসেই আমাকে বলতেছে এই প্রিয়ম তুই আমাকে ৩ হাজার টাকা ধার দিতে পারবি?


আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম! 

বিনুদা কখনও এভাবে আমার কাছে হাত পাতে না..

কিন্তুু আজ হঠাৎ কি কারনে??


আমি প্রতিউত্তরে বললাম,,, 

হ্যাঁ দেওয়া যাবে,

 কিন্তুু কাহিনী কি বিনুদা?


বিনুদা ঘাম ঘাম মুখে আমাকে বলতেছে... 

দেখ প্রিয়ম,

তুই ছোট ভাই আবার বন্ধু বটে.... তবুও তোকে বলতে আনকমফোর্ট ফিল করতেছি....

 কিন্তুু না বলেও উপায় নেই....

আমি বললাম.. 

হ্যাঁ বলো...

প্রিয়ম তোর রুনাদি,,,

হ্যাঁ রুনাদি কি হয়েছে বলো?


তোর রুনাদি বেবী কন্সিভ করে ফেলেছে...

আমি এর উত্তরটা কিভাবে দিব?

কিছু বুঝে না উঠেই ডিরেক্ট বলে ফেললাম বিয়ে করে ফেলো...

এটা শুনে আরও হতভম্ব বিনুদা...


আরেহ ধুর..........

কি বাজে বকছিস?

আমার কি এখনও বিয়ের সময় হয়েছে? 


আমি চট করে রেগে গেলাম...

বিয়ের সময় হয় নি এটা ভাল করে বুঝতেছো কিন্তুু যখন পৃথিবীর কোনো দৈব শক্তির তোয়াক্কা না করে দুজনে শরীর উপভোগের খেলায় মেতে ওঠেছো তখন তো অন্ততপক্ষে হুশ রাখার দরকার ছিল!!


বিনুদা চুপ করে বসে আছে.....

আমি টাকাটা বের করে বিনুদার হাতে দিয়ে বললাম চলো কোন ক্লিনিকে যাবে??


দুজনেই ছুটছি ক্লিনিকের দিকে....

গিয়ে দেখি রুনাদি একটা চেয়ারে বসে আছে...

আমাকে দেখে লজ্জায় মুখ লাল হয়ে চুপসে গিয়েছে....


আমি আর বিনুদা ক্লিনিকের মহিলা ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতেছিলাম এবোরশনের বিষয়ে....


মহিলা ডাক্তার  নাজমা আপা...

আমাদেরকে সুন্দর করে বুঝাচ্ছিলো এইভাবে একটা অনাগত ভবিষ্যৎকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য দেখানোর আগেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়াটা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কয়েকটি হত্যার মধ্যে অন্যতম একটি.....


তুমরা শিক্ষিত ছেলেমেয়ে জেনে শুনে একটা  সভ্য  যুগে এসেও কেন এমন অসভ্য  নির্মমতার খেলা খেলো?


দুজনেই চুপ করে বসে আছি....

অবশেষে নাজমা আপার তত্বাবধানে সাবলীলভাবে এবোরশনটা সফল হলো....

রুনাদি একদম দুর্বল হয়ে পড়েছে...


ইস বেচারীকে দেখে আমার খুব মায়া জমে গেছে....


একজন মা... 

সে হোক বেশ্যা,

হোক পতিতা,

হোক পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নোংরা মানুষ,,

কিন্তুু তার সন্তানের কাছে তিনি শ্রেষ্ঠ মানব...


অথচ এই রুনাদি তার অনাগত সন্তানকে হত্যা করে পৃথিবীর অন্যপৃষ্ঠে শ্রেষ্ঠ কিলার হিসেবে নিজের নাম অঙ্কিত করলো..


রুনাদি এই সম্পূর্ণ কাজটা করেছে বিনুদার চাপে পড়ে...


বিনুদা যদি তাকে মেনে নিয়ে বিয়ে করতো.. 


তাহলে অন্ততপক্ষে অনাগত সন্তানকে পৃথিবীর মুখ দেখানো যেতো...

এবং রুনাদি, বিনুদা বাবা মা হিসেবে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমান দিতে পারতো.....


রুনাদির করুন চেহারটা দেখে মনের অগোচরে সেদিন বিনুদাকে খুব কঠিন কিছু কথা বলেছিলাম....


অনেক সময় গড়িয়ে গেলো... 

আমার আর বিনুদার পড়াশোনা শেষ হলো...

আমি একটা প্রাইভেট জবে আছি..

আর বিনুদার সাথে কত বছর হলো যোগাযোগ নেই...


হঠাৎ সেদিন আচমকা অনলাইনে বিনুদার আইডিটা পেলাম...

রিকুয়েস্ট দিলাম...

সাথে সাথে একসেপ্ট করে ফেললো...

এবং চ্যাটিংয়ের মাধ্যমে নাম্বারটা নিয়ে অনেক কথা হলো...


বিনুদা ইনকাম ট্যাক্স অফিসার হিসেবে আছে...

একে তো সরকারী তার উপর উপরি মাইনের বাহাদুরি.... 

ঢাকায় ৩ টা ফ্ল্যাট একটা প্রাইবেট কার 

এলাকায় অনেক জমিজমা কিনেছে আরও অনেক কিছু....


ভবিষ্যতে রাজনীতিতে জড়াবে এমন ইচ্ছেও আছে......


বিয়ের প্রসঙ্গ আনতেই বিনুদা বিমর্ষ হয়ে গেছে...


প্রিয়ম আমি তো বিয়ে করেছি প্রায় ৫ বৎসর হলো...

জিগ্যেস করলাম রুনাদিকে??

নারে...


বাবা মায়ের পছন্দে...

আমি মনে মনে বলতেছি

আসলে এটা একটা মেকি কথা...

বাবা মায়ের কাঁধে বন্দুক রেখে ফাঁকা গুলি ছুড়া...


আমার ইচ্ছেকে টলাবে পৃথিবীর এমন কোনো শক্তি আছে???

যদি স্বদিচ্ছা হয়??


কিন্তুু আমার স্বদিচ্ছা না থাকলে তখন আর কিছু করার থাকে না..


 


বিনুদা বলতেছে মনের দিক থেকে আমি সুখী নয়রে প্রিয়ম....


আমি জিগ্যেস করলাম কেন দাদা?

বলতেছে তোর ভাবীর বাচ্চা হবে না কোনোদিন... 

এই যে আমার এত প্রপার্টিজ...

বাড়ি,গাড়ী সব জনগনের জন্য উৎসর্গ করে দিব রাজনীতির মাধ্যমে...


মানুষের সেবায় নিজের সব বিসর্জন দিয়ে দিবো চিন্তা করেছি....

অনেক কথা হলো.. 

ফোনটা রেখে দিয়ে মনে মনে ভির ভির করতেছি আর ভাবতেছি...


প্রকৃতি কি তার প্রতিশোধ পৃথিবীতেই নিয়ে নেয়?

যে বিনুদা একসময় একটা অনাগত ভবিষ্যৎ নিজের হাতে হেলায়,  অবহেলায়,অযাচিতভাবে, ধ্বংস করেছিলো অথচ আজ এমন একটা ভবিষ্যৎ আলোকবর্তিকার সৃষ্টির জন্য হন্যে হয়ে দিশে হারা.


যৌবনের অবহেলা,অযাচিত খামখেয়ালিপনা তুচ্ছ বিষয়গুলোই কি ভবিষ্যতে কাল হয়ে দাঁড়ায়......?????


১০.০৫.২০২১

...

Post a Comment

Previous Post Next Post